সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫, ০৫:২৪ অপরাহ্ন

জনপ্রিয় তিন নাট্যাভিনেত্রী যেভাবে মাদককাণ্ডে জড়াল

জনপ্রিয় তিন নাট্যাভিনেত্রী যেভাবে মাদককাণ্ডে জড়াল

অনলাইন ডেস্ক:: বর্তমান প্রজন্মের সুপরিচিত তিন অভিনেত্রী সাফা কবির, মুমতাহিনা টয়া ও তানজিন তিশা। তাদের অসংখ্য ফ্যান-ফলোয়ার আছে। নাটকের পরিচালক-প্রযোজকদের কাছে তাদের কদরও বেশ ভালো। ছোটপর্দার সেই সুন্দরী অভিনেত্রীরাই কিনা মাদকের ভয়ানক নেশায় আসক্ত! নিয়মিত অর্ডারও করেন নানা ধরনের মাদক।

সম্প্রতি এমনই বিস্ফোরক তথ্য এক মাদক কারবারির হোয়াসঅ্যাপ চ্যাট গ্রুপ থেকে পেয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (নারকোটিক্স)। যে গ্রুপে শুধু সাফা, টয়া, তিশাদের মতো জনপ্রিয় অভিনেত্রীরাই নন, নিয়মিত মাদকের অর্ডার করেন সুনিধি নায়েক নামে কলকাতার একজন গায়িকাও।

সাফা-টয়া-তিশাদের তো দেশের কম-বেশি সবাই চেনেন, তবে এই চতুর্থ নারী অর্থাৎ সুনিধি নায়েককে চিনতে একটু গভীরে যেতে হবে। তিনি হলেন- কোক স্টুডিওর অন্যতম উদ্যোক্তা ও জনপ্রিয় গায়ক শায়ান চৌধুরী অর্ণবের স্ত্রী। বাংলাদেশি গায়ককে বিয়ের সুবাদে কয়েক বছর ধরে স্থায়ীভাবে ঢাকায় বসবাস করছেন কলকাতার মেয়ে সুনিধি।

সুন্দরী মাদকসেবীদের সন্ধান মিলল যেভাবে

গত ১৭ অক্টোবর মাদক কেনা-বেচার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন অরিন্দম রায় দীপ নামে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাবেক শিক্ষার্থী। একটি বিশেষ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে তিনি নিয়মিত মাদক বিক্রি করে আসছিলেন। সেই গ্রুপেই দেখা মেলে সাফা-টয়া-তিশা ও সুনিধিদের।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অনুসন্ধান করে প্রমাণ পেয়েছেন, গ্রেপ্তারকৃত দীপের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এই তিন অভিনেত্রী ও গায়িকা সুনিধির নামে সেভ করা কয়েকটি নম্বর থেকে নিয়মিত মাদকের অর্ডার দেওয়া হয়েছে। তারা সিসা, এমডিএমএ, এলএসডি ও কুসসহ বেশ কিছু মাদক গ্রহণ করেছেন। এ ব্যাপারে আরও অনুসন্ধান চালাচ্ছে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ে এ বিষয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক রাহুল সেন বলেছেন, দীপকে গ্রেপ্তারের পর তার কাছ থেকে আমরা কয়েকজন প্রথমসারির অভিনেত্রী ও মডেলের মাদক সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছি। এ বিষয়ে এখনও তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, মাদক সম্পৃক্ততার অভিযোগে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী দীপের ওপর বিশেষ নজরদারি করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে তার গতিবিধি অনুসরণের ধারাবাহিকতায় গত ১৭ অক্টোবর ঢাকা বিমানবন্দর থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

এ সময় দীপের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ সিসা, এমডিএমএ, এলএসডি ও কুসসহ বেশ কিছু মাদক উদ্ধার করা হয়। পরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি বিশেষায়িত টিম দীপকে দুই দিনের রিমান্ডে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করে।

তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানান, মাদক ব্যবসার বিষয়ে মৌখিক স্বীকারোক্তির একপর্যায়ে দীপের মোবাইল ফোনের কললিস্ট ও হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটিং পরীক্ষা করা হয়। এতে তিন অভিনেত্রী সাফা কবির, টয়া, তানজিন তিশা এবং ওপার বাংলার গায়িকা সুনিধি নায়েকের মাদক সম্পৃক্ততার তথ্য মেলে। তারা যে বিভিন্ন সময়ে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটিংয়ে মাদকের অর্ডার দিয়েছেন, তার প্রমাণও পাওয়া যায়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, গ্রেপ্তারকৃত দীপের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সাফা, টয়া, তিশা এবং সুনিধি নায়েকের নামে সেভ করা কয়েকটি নম্বর থেকে নিয়মিত মাদকের অর্ডার দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। পরে নম্বরগুলো যাচাইয়ের জন্য ফোন নম্বরের রেজিস্ট্রেশন রেকর্ড সংগ্রহ করা হয়। এতে দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট নম্বরগুলো সাফা কবির এবং টয়ার নামেই রেজিস্ট্রেশনকৃত। তবে তানজিন তিশার নম্বরটির রেজিস্ট্রেশন তার মা উম্মে সালমার নামে।

কয়েকটি চ্যাটিং রেকর্ডে দেখা যায়, গত ২৩ এপ্রিল সাফা কবির তার মোবাইল নম্বর থেকে তিনটি এমডিএমএ অর্ডার দেন। এজন্য দীপের হোয়াটসঅ্যাপে তিনি সংক্ষেপে লেখেন, ‘ই’ দিতে পারবা আমাকে তিনটা।’ জবাবে দীপ লেখেন, ‘দাঁড়াও বলি’। সাফা লেখেন, ‘ওকে’। এরপর দীপ লেখেন, ‘কিভাবে নিবা? যাওয়ার পথে?’ সাফা লেখেন, ‘আমি চেষ্টা করব।’

এছাড়া গত ৫ সেপ্টেম্বর আরেকটি চ্যাটিংয়ে মাদকের অর্ডার দেন অভিনেত্রী মুমতাহিনা টয়া। তিনিও সাংকেতিক ভাষায় লেখেন ‘ই’ লাগবে পাঁচটা। ফিরতি বার্তায় দীপ লেখেন, ‘ফর বাংলা ফ্রুট?’ (সম্প্রতি কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত প্রাইভেট পার্টি)। এরপর টয়া লেখেন ‘ইয়াপ (ইয়েস)।’

এই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে অভিনেত্রী তানজিন তিশা এবং সংগীতশিল্পী সুনিধি নায়েকের কথোপকথনও। চ্যাটিংয়ে ভারতীয় নাগরিক সুনিধি নায়েক কয়েকটি ব্র্যান্ডের এমডিএমের প্যাকেট শেয়ার করে অর্ডার দেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মাদকে আসক্ত বলে জানিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানান, মাদক কারবারি দীপ গ্রেপ্তারের পরপরই তার সঙ্গে লেনদেনে সম্পৃক্ত কেউ কেউ তাদের মোবাইল ফোন থেকে গোপন চ্যাটিং রেকর্ড মুছে ফেলার চেষ্টা করেন। কিন্তু এতে তারা পুরোপুরি সফল হননি। গ্রেপ্তারের পর তাৎক্ষণিকভাবে দীপের মোবাইলের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় মাদক কেনাবেচা সংক্রান্ত চ্যাটিং রেকর্ড মুছে ফেলা সম্ভব হয়নি।

জানা গেছে, বর্তমানে রাজধানীর গুলশান এবং বনানীকেন্দ্রিক ধনাঢ্য পরিবারের সন্তানদের অনেকেই এমডিএম, এলএসডি এবং কুশ নামের উচ্চ আসক্তি সম্পন্ন মাদকের দিকে ঝুঁকছে। চোরাইপথে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং থাইল্যান্ডসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশ থেকে এসব মাদকের চালান আসে। স্ল্যাপচ্যাট, মেসেঞ্জার বা হোয়্যাটসঅ্যাপ গ্রুপে এগুলো বিক্রি হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গোপনীয়তার জন্য বিভিন্ন সাংকেতিক নামে এসব মাদক বিক্রি করা হয়ে থাকে। যেমন এমডিএম ‘ই’ নামে, এলএসডি ‘এসিড’ এবং এক ধরনের তরল গাঁজা টিএসসি নামে কেনাবেচা হয়। ইলেকট্রিক সিগারেটের মতো ভেপ আকারে তরল গাঁজাও সেবন করা হয়।

যদিও এখন পর্যন্ত মাদককাণ্ডে নাম জড়ানো তিন অভিনেত্রী সাফা-টয়া এবং তিশাদের কেউই এ নিয়ে মুখ খোলেননি। যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের ব্যক্তিগত সেলফোনে সংযোগ পাওয়া যায়নি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com